ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন

বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যদিও বা ডায়াবেটিস (বহুমূত্ররোগ) নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও অনেকে আছেন জানেন না কখন তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন

প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস কি? তড়িৎগতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ মাধ্যম ইনসুলিন ইনজেকশন। এই ইনসুলিন ইনজেকশন কিভাবে দিতে হয় অনেকেই হয়তো এই পদ্ধতি সঠিকভাবে জানেন না।

এই পোস্টে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খুব সহজেই ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারবেন।

ডায়াবেটিসের ইতিহাস

ডায়াবেটিস রোগটি মূলত মেলাইটাস (mellitus) নামেও পরিচিত। প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মিশরীয় পাণ্ডুলিপিতে এই রোগটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

তবে ডায়াবেটিস হলে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। এই রোগটি সাধারণত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে নির্ণয় করা হয়। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন এর ব্যবহার

১। ইনসুলিন ইনজেকশন ব্যবহারের আগে প্রথমে ইনসুলিন বোতলের ক্যাপ ঠিক আছে কি না। বোতলের গায়ে এর কার্যক্ষমতার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ লেখা আছে তা দেখে নিন। এছাড়াও লক্ষ্য করুন প্রতি মিলিতে কত ইউনিট ইনসুলিন আছে।

যেমন, ৪০ ইউনিট না ১০০ ইউনিট। সে হিসেবে ইনসুলিন সিরিজ ব্যবহার করুন।

২। ইনজেকশন নেওয়ার জন্য প্রয়োজনী সিরিজ জীবানুমুক্ত তুলা ইত্যাদি হাতের কাছে রাখুন।

৩। সাবান ও পানি দিয়ে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

৪। দুই হাতের তালুর মাঝে ইনসুলিনের বোতল ধরে ভালোভাবে ঘুরিয়ে নিন। তাবে জোরে ঝঁকুনি দিবেন না।

৫। বোতলের রাবার ক্যাপ স্পিরিট দিয়ে মুছে নিন এবং বাতাসে তা আপনা আপনি শুকিয়ে নিন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিন ইনজেকশন এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিন

৬। যতটুকু ইনসুলিন দরকার ততটুকু বাতাস সিরিজে টেনে নিন। অবশ্যই মনে রাখবেন ৪০ ইউনিট ইনসুলিনের জন্য ৪০ ইউনিট সিরিজ এবং ১০০ ইউনিট ইনসুলিনের জন্য ১০০ ইউনিট সিরিজ ব্যবহার করতে হবে।

৭। এবার সুঁচ বোতলের মুখে রাবারে মাঝ বরাবর দিয়ে ভেতরে ঢোকাতে হবে। আপনার হাত যাতে সুঁচের কোন অংশে না লাগে।

৮। সিরিজের বাতাস বোতলে ঢুকিয়ে দিন।

৯। এখন সুঁচ সহ বোতলটা উল্টিয়ে ধরুন। দেখবেন এমনিতেই সিরিজে পরিমাণ মতো ইনসুলিন এসে যাবে। প্রয়োজন হলে হালকা টান দিয়ে বাঁকি ইনসুলিন সিরিজে টেনে নিন।

১০। সিরিজে যেন বাতাস বা বুদবুদ না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল করুন। বাতাস বা বুদবুদ থাকলে তা বোতলের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আবার ইনসুলিন টানুন।

১১। এবার ইনসুলিনসহ সিরিজ টেনে বের করুন। তারপর রোগীকে ইনজেকশন দিন।

১২। যে স্থানে ইনজেকশন দিবেন সেই স্থানে জীবানুমুক্ত তুলো দিয়ে ভালোভাবে পরিস্কার করুন।

১৩। ইনজেকশন দেওয়ার আগে স্থানটির ত্বক টেনে ধরে ৪৫ থেকে ৭৫ কোনাকুনিভাবে সুঁচ ঢুকিয়ে দিন (ত্বক পাতলা হলে)।

১৪। অবশ্যই খেয়াল করুন ইনসুলিন ত্বক এবং মাংসপেশীর মাঝের ফাঁকা স্থানে পৌঁছাতে হবে।

১৫। ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে দু’বাহুর বাইরের দিক। যেমন, দ’উরুর সামনের দিক, দু’নিতম্বে এবং তল পেটের নীচের অংশের দু’দিকে।

১৬। প্রতিদিন একই স্তানে ইনজেকশন দেওয়া উচিত নয়। এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে যেন ১ মাসের মাঝে একই স্থানে দু’বার ইনজেকশন না পড়ে।

ডায়াবেটিস হলে নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব বিষয় মনে রাখবেন

  • আপনি আর যে কোনও লোকের মতো একজন সুস্থ জীবন যাপন করতে পারেন। যদি আপনি ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানতে, বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে পারেন।
  • আপনার শরীরে থাকা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আপনাকে নিজেই চেষ্টা করতে হবে। চিকিৎসকসহ আর সবাই থাকবেন শুধু সাহায্যকারী বা পরামর্শদাতার ভূমিকায়।
  • অসুস্থ অবস্থাতেও আপনি ইনসুলিন নিতে থাকবেন। যদি খেতে না পারেন তাহলে তরল খাবার খাবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
  • সব সময় একটা বাড়তি ইনসুলিনের শিশি কাছে রাখবেন। যাতে ভেঙ্গে গেলে ইনজেকশন নিতে দেরি না হয়।
  • সঠিক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার অর্থ শুধু চিকিৎসাই নয়, নিয়মিত রোগাটার গতিবিধি নির্ণয় করাও।
  • নিয়মিত পরিক্ষা করা এবং তার ফলাফল নিখুঁতভাবে নথিবদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরী।
  • সব সময় গ্লুকোজ, চিনি বা মিষ্টি কিছু সঙ্গে রাখবেন, হঠাৎ হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে যাতে সামাল দিতে পারেন।
  • হাত, পা, চোখ, দাঁত ও ত্বকের ভালোমতো যত্ন নিবেন
  • সুষম আহার, নিয়মিত ব্যায়াম, ঔষধপত্র এবং এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে আপনার লক্ষ্য পূরণ করতে সাহায্য করবে, ডায়াবেটিস থাকা সত্বেও।

সবশেষে:

উপরে থাকা বিষয়গুলো মাথায় রেখে ডায়াবেটিস সংক্রান্ত সকল তথ্য অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করতে পারেন।

সূত্র:- Right News BD

bn_BDBengali