ঘি এর উপকারিতা

ঘি খাবারের মধ্যে আমরা অনেক খেয়ে থাকি। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি এই শক্তিশালী ঘি এর উপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের তৈরি ঘিতে রয়েছে ফসফোলিপিড যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি।

ঘি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও কিন্তু সত্য। ঘিতে রয়েছে কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড। যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা থেকে শুরু করে ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া ক্যান্সার প্রতিরোধেও ঘি এর যথেষ্ঠ উপকারিতা রয়েছে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ঘি এর উপকারিতা

আমরা যে ঘি ঘরে তৈরি করি তার মধ্যে থাকে ফসফোলিপিড যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ফসফোলিপিড পাওয়া যায় না কারখানার ঘি এর মধ্যে। ঘি এর মধ্যে থাকা ভিটামিন A, D, E, এবং K যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি এর মধ্যে থাকা ভিটামিন-কে ক্যালসিয়ামের সাথে মিলে হাড়ের উপকার করে এবং হাড়ের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে। আবার ইনসুলিন ও শর্করার মাত্রা বজায় রাখতেও ভিটামিন-কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর যেহেতু ঘি এর মধ্যে ভিটামিন-কে রয়েছে তাই নিয়মিত ঘি খেলে ইনসুলিন ও শর্করার মাত্রা ঠিক থাকবে। আর ঘি এর মধ্যে থাকা ভিটামিন-এ, ডি, ই এবং কে আমাদের হৃদপিণ্ডের জন্যও বেশ উপকারী।

তাছাড়া ঘি এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক লুব্রিকেন্ট যা গিঁটে ব্যাথা ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা সমাধানে কাজ করে। আর ঘি এর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ও ফ্যাটি এসিড যা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কাজ করে আবার হাড়কেও ভালো রাখতে সহায়তা করে।

খালি পেটে ঘি‘র উপকারিতা

চুল পড়া কমাতে হলে আপনাকে খালি পেটে ঘি খেতে হবে। কিছু দিন খালি পেটে ঘি খেলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে। তাছাড়া চুল নরম ও উজ্জ্বল হবে।

ঘি খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে নাকি কমে

আমরা জানি কোলেস্টেরলের দুটি দিক। একটি উপকারী আরেক টি অপকারী। ঘিতে রয়েছে উপকারী কোলেস্টেরল। আর ঘিতে রয়েছে কনজুগেটড লিনোলেক এসিড ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণাগুণ যা শরীরের ক্ষত দূর করতে সাহায্য করে। তাই মেয়েদের বাচ্চা প্রসবের পর ঘি খাওয়ানো হয় যাতে তাড়াতাড়ি ক্ষত শুকিয়ে যায়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে ঘি’র কার্যকারিতা

ব্রেনের টনিক হিসেবে ঘি ভালো কাজ করে। তাছাড়া পুষ্টিবিদের মতে ঘি ব্রেনের নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সার্বিক ভাবে ব্রেনের শক্তিকে বৃদ্ধি করে। তাছাড়া ঘি এর মধ্যে থাকা ওমেগা-৬ ও ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্ককে সবসময়ের জন্য চাঙ্গা রাখে। আর আমাদের ব্রেন যখনি চাঙ্গা থাকবে তখুনি আমাদের মস্তিষ্ক ভালো কাজ করবে। আর মস্তিষ্ক যতো ভালো কাজ করবে ততো স্মৃতি শক্তি বাড়াতে থাকবে।

ঘি ওজন কমাতে সাহায্য করে

ঘি এর মধ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীরের এনার্জি ফিরিয়ে আনে। যখন আমাদের শরীরের মধ্যে এনার্জি বৃদ্ধি পাবে তখনই আমরা কাজের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে উঠি। আর কাজের মনোযোগ যতো বৃদ্ধি পাবে ততো আমাদের মধ্যে অলসতা কমতে থাকে। আর বিশেষ করে যারা অ্যাথলেট তারা দৌঁড়ানোর আগে ঘি খেয়ে নিন। যার ফলে তাদের ওজন কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধির খাবার ‘ঘি’

ঘি এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বাটাইরিক এসিড, যা খাবারকে তাড়াতাড়ি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর বিশেষ করে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভোগেন তাদের জন্য ঘি অনেক উপকারী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির খাবার হতে পারে ঘি

ঘি এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস থাকায় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ঘি এর একটি দারুণ গুণ রয়েছে আর তা হলো ঘি সহজে নষ্ট হয় না যার ফলে দীর্ঘ দিন ধরে ঘি খাওয়া যায় আর দীর্ঘ দিন ঘি খাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

খিদে কমানোর উপায় হতে পারে ঘি

ঘি এর মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ আর ফ্যাটি এসিড আপনার ক্ষিদেকে অনেক কমিয়ে দিবে। যার ফলে আপনার ওজনও কমার একটা সম্ভবনা থাকে।

ত্বকের যত্নে ঘি এর ব্যবহার

ঘি এর মধ্যে কোষ পুনর্গঠন করার ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া প্রাকৃতিকভাবে ঘি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে। ঘি ত্বককে অনেক ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের সোরিয়াসিস নামক রোগ কমাতে কাজ করে। তাই প্রতিদিন খালি পেটে ঘি খাওয়া শুরু করুন। তাহলে আপনার ত্বকের ভেতরে থাকা কোলাজেনের উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং আপনার ত্বক দেখতে অনেক সুন্দর দেখাবে।

রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার

ঘি এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় সেই প্রাচীন কাল থেকেই রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার হয়ে আসছে। তাছাড়া ঘি ত্বকের প্রদাহ, ক্ষত কিংবা পোড়ার দাগ মোছতেও দারুণ কাজ করে।

ক্যান্সার রোগীদের জন্য ঘি

ঘি এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিকেলদের ক্ষতি করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। যার ফলে কোষের বিন্যাসে পরিবর্তন হয়ে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।

চোখের যত্ন নিতে ঘি এর উপকারিতা

আমরা জানি যে, ঘি এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-ই। আর এই ভিটামিন-ই চোখের জন্য বেশ উপকারী। তাই নিয়মিত যদি ঘি খেয়ে যান তাহলে অবটিক নার্ভের উন্নতি ঘটবে। যার ফলে আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো হবে।

ঘি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে

ঘি এর মধ্যে রয়েছে ন্যাচারাল লুব্রিকেটিং যা এক ধরনের পিচ্ছিল উপাদান। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে সমস্যায় আছেন, তারা এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক চামচ ঘি মিশিয়ে চুলায় কিছুক্ষণ গরম করে নিন। এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তা খেয়ে ফেলুন। এভাবে কিছু দিন খেলে আশা করা যায় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।

আয়ুর্বেদ বিশ্বাস অনুযায়ী ঘি এর উপকারিতা

ঘি নানা রকমের রোগ থেকে বাঁচিয়ে দীর্ঘজীবন লাভ করতে সাহায্য করে এটাই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিশ্বাস। ঘি সম্পৃক্ত চর্বিতে দ্রবণীয় পরিপোষক উপাদান শোষণে সাহায্য করে। এছাড়াও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এটাও বিশ্বাস করা হয় যে, ঘি অস্থি সংযোগ পুষ্টি যোগায় ও পিচ্ছিলকারি উপাদান সরবরাহ করে।

ঘি বানানোর নিয়ম

গরু, ভেড়া কিংবা ছাগলের দুধ দিয়ে ঘি বানানো যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরুর দুধ দিয়েই ঘি বানানো হয়। প্রথমে দুধ থেকে বাটার বা মাখন বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই মাখন ভালোভাবে ফেটে নিতে হবে। তারপর তা জ্বাল দিলে ঘিতে পরিণত হবে। ঘরেও আপনি এই পদ্ধতিতে ঘি বানাতে পারেন। তবে অনেকেই আবার দুধের সর দিয়ে ঘি তৈরি করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে জমানো সর যদি বেটে বা ব্লেন্ড করে জ্বাল দেন তাহলেও সেটা ঘিতে পরিণত হবে।

ঘি খাওয়ার নিয়ম

ঘি খাওয়ার মধ্যেও একটা বিশেষত্ব আছে। কেননা আপনার এটি জানা জরুরি যে, ঘি কিভাবে খেলে আপনি এর সর্বোচ্চ উপকারটুকু পাবেন। তাই আপনি খাবারের সঙ্গে মাঝে মাঝে এক চামচ দেশি ঘি খেয়ে নিবেন। এতে আপনার শরীর পুষ্টি পাবে। আপনার হার্ট ভালো থাকবে। নিয়ন্ত্রণে থাকবে আপনার ওজন। আপনার ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল সবকিছুই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে বেশি ঘি খাবেন না এতে আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে।

সিডিসির বিজ্ঞানীদের মতে, সারাদিনে আমাদের যতো ক্যালোরি খাওয়ার কথা, তার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ আসা উচিত আসলে ফ্যাট থেকে। তার মধ্যে যদি ১০ শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে আসে তাহলেও কোন ক্ষতি নেই। এখন যেহেতু এক চামচ ঘি এর মধ্যে ১৫ গ্রামের মতো ফ্যাট থাকে আর ৯ গ্রামের মতো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, সেই অনুযায়ী দিনে দুই চামচ ঘি খাওয়া যেতেই পারে। তাছাড়া এক চামচ ঘি এর মধ্যে ৪৫ মিলিগ্রামের মতো কোলেস্টেরল পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের দৈনিক চাহিদার ১৫ শতাংশ মেটাতে সক্ষম।

ঘি এর পুষ্টি উপাদান

১৫ গ্রাম ঘি এর পুষ্টিগুণঃ

  • ক্যালরিঃ ১৩০
  • ফ্যাটঃ ১৫ গ্রাম
  • সোডিয়ামঃ ০ মিলিগ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ০ গ্রাম
  • ফাইবারঃ ০ গ্রাম
  • সুগারঃ ০ গ্রাম
  • ভিটামিন-ডি
  • ভিটামিন-কে
  • ভিটামিন-ই
  • প্রোটিনঃ ০ গ্রাম
  • ভিটামিন-এ
  • ভিটামিন-সি

সূত্র:- Right News BD

bn_BDBengali