গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি সমস্যা প্রায় আমাদের সবার জীবনে কম-বেশি হয়ে থাকে। বিভিন্ন খাবার, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত স্ট্রেসের কারণে আমাদের পেটে গ্যাস তৈরি হয়। তবে, কিছু সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করা যায়। আসুন, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
১. আদা চা
আদা গ্যাস্ট্রিকের জন্য খুবই উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। আদাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে সামান্য আদা কুচি করে পানিতে ফেলে ৫-১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিন।
এরপর এটি ছেঁকে নিন এবং সামান্য মধু মিশিয়ে পান করুন।
প্রতিদিন ১-২ কাপ আদা চা খাওয়া গ্যাস্ট্রিক কমাতে কার্যকর হতে পারে।
২. মধু ও দারুচিনি
মধু এবং দারুচিনি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পেটে গ্যাস সৃষ্টি কমায়। মধুর প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপশমে কার্যকর।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ মধু এবং এক চিমটি দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এটি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।
৩. ঠাণ্ডা দুধ
ঠাণ্ডা দুধ গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে এবং পেটে পোড়া ভাব কমাতে সহায়ক। এতে থাকা ক্যালসিয়াম হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অতিরিক্ত অ্যাসিডকে নিরপেক্ষ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- একটি গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ দিনে ১-২ বার পান করুন।
- রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ পান করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
৪. পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং অ্যাসিডিটি কমায়। এর শীতল প্রভাব পেটের জন্য আরামদায়ক।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা কুচি করে পানিতে ফুটিয়ে নিন।
- এরপর এই মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হলে পান করুন।
- প্রতিদিন খাবারের পর পুদিনা পাতা চা খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমে যায়।
৫. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য খুবই কার্যকর। এটি পেটের অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক গ্লাস পানিতে ১-২ চা চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।
- এটি খাবারের আগে পান করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়।
৬. এলাচ
এলাচের প্রাকৃতিক উপাদান হজমশক্তি বাড়াতে এবং পেটের অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক। এটি গ্যাস্ট্রিকের কারণে পেটে ফাঁপা ভাব ও ব্যথা দূর করতে কার্যকর।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- কয়েকটি এলাচ চিবিয়ে খেলে পেটের গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমে।
- এছাড়া এলাচ চা বানিয়ে পান করলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
৭. তুলসী পাতা
তুলসী পাতা গ্যাস্ট্রিক এবং হজম প্রক্রিয়ার জন্য একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক ঔষধ। তুলসী পাতার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- কয়েকটি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বা তুলসী চা বানিয়ে পান করলে পেটের গ্যাস সমস্যা দূর হয়।
- প্রতিদিন ২-৩ বার তুলসী পাতা চা পান করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান মিলতে পারে।
৮. ত্রিফলা
ত্রিফলা হলো হরিতকী, বহেড়া ও আমলকী দিয়ে তৈরি একটি প্রাকৃতিক মিশ্রণ, যা হজমশক্তি বাড়াতে ও পেটের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। ত্রিফলা গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমাতে খুবই উপকারী।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- রাতে শোয়ার আগে এক চামচ ত্রিফলা গুঁড়া এক গ্লাস গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।
- প্রতিদিন এটি খাওয়া গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে সহায়ক।
৯. হলুদ গুঁড়া
হলুদে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটে গ্যাস জমতে বাধা দেয়।
ব্যবহারের পদ্ধতি:
- এক গ্লাস গরম দুধে আধা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
- নিয়মিত হলুদ দুধ পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যায়।
কিছু বাড়তি পরামর্শ
ভালোমতো চিবিয়ে খাবার খান – দ্রুত খাবার খাওয়া পেটের সমস্যা বাড়ায়, তাই ধীরে ধীরে ও ভালোমতো চিবিয়ে খাওয়া উচিত।
ভাজাপোড়া খাবার পরিহার করুন – অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এবং মশলাদার খাবার গ্যাস্ট্রিক বাড়ায়, তাই সেগুলি এড়িয়ে চলা উচিত।
অতিরিক্ত পানি পান – পেট ভালো রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা প্রয়োজন।
এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি মেনে চললে সহজেই আপনি গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
সূত্র: Right News BD


 Bengali
Bengali				 English
English